সুব্রত মুখার্জী
গোলাপী র ভালোবাসায় সুব্রত গোলাপী।

পুরুষোত্তম শ্রী রাম তাঁহার ন্যায়,নীতি অনুসরণ করিয়া ধর্মের পথ অবলম্বন করিয়া রাবণের হাত হইতে সীতা কে উদ্ধার করিলেন। তাঁহার হৃদয় সর্বদা প্রজার কল্যাণের নিমিত্ত অনুরণিত হইত। সর্ব প্রকার সুখ স্বাচ্ছন্দ্য ও ব্যক্তিগত সুখ পরিত্যাগ করিয়া সজাগ দৃষ্টি ব্যাপৃত করিয়া শ্রী রাম চন্দ্র অন্যায় কে ধ্বংস করিয়া ন্যায় কে প্রতিষ্ঠা করিয়াছেন। সেই রাবণকে শ্রী রাম বধ করিয়া সত্যের পথ, ধর্মের পথ কে প্রশস্ত করিয়াছিলেন।
রাবণের দহন ও ধ্বংস পাপের পথ, অন্যায়ের পথ, অধর্মের পথ কে নির্মূল করিয়া কল্যাণের পথ কে পুনঃ প্রতিষ্ঠিত করিয়া ছিল।
The New World (Natun Prithibi)
সম্পূর্ণ বিশ্বাস অদ্যাবধি টলিয়া যায়নাই যদিও দৃষ্টির সম্মুখে লক্ষ কোটি রাবণ উন্মত্ত উগ্র রূপে প্রকট হইয়া প্রতিনিয়ত অন্যায় করিয়া চলিতেছে এবং রাবণ অনুরাগী, অসংযমী, পাপাচারী, ক্ষমতালোভী, অসৎ, অকর্মন্য মানব রূপী নরাধম শত সহস্র বা ততোধিক সর্বদিক মুখরিত করিয়া চলিতেছে।
ন্যায়, সততা, ধর্ম , চরিত্র, মানবিক গুণাবলী আজ ধুলায় লুণ্ঠিত। বিচার আজ নিশ্চিহ্ন প্রায়। রাবণ মরিয়াছে সত্য কিন্তু রাবণ উপযোগী ও রাবণ অনুরাগী রাবণ সম মনুষ্য রূপী জীবের আবির্ভাব ঘটিয়াছে এবং তাহারা সর্বত্র বিরাজমান হইয়া নিজ নিজ বৈশিষ্ট্যে রাবণ রূপী কার্য করিয়া চলিতেছে।
যে শাসনে প্রজা অনাহারে মৃত্যু মুখে পতিত হইয়া থাকে, যে শাসনে মানব জীবন পশুতুল্য হইয়া কোনোমতে জীবন ধারণ করিয়া থাকে। যে শাসনে সীতা সমান নারী রাবণ রূপী রাক্ষসের হাতে নির্যাতিতা হইয়া উঠে সেই পরিবেশে শ্রী রাম অনুসারী কর্ম কী করিয়া প্রতিষ্ঠিত হইবে?
The New World (Natun Prithibi)
এক রাবণ মরিয়াছে কিন্তু সহস্র লক্ষ রাবণ যে সমাজের সর্বত্র প্রকট রূপে আবির্ভূত হইয়া উঠিয়াছে তাহাদের সমস্ত সমষ্টিকে একযোগে দাহ করিতে হইবে। রাবণের কুশ পূত্তলিকা দাহ করিয়া সমাজ বাঁচিবেনা। ঘটা করিয়া পুত্তলিকা দাহ করিয়া রাবণ রূপী রাক্ষস বর্গ কে স্ব স্থানে বিরাজমান রাখিয়া কী ধর্ম পালন হইবে?
রাবণ মরিল তাহার দহন ও হইল কিন্তু তাহার কর্ম নিশ্চিহ্ন হইলনা! তাহার অপকর্ম গুলি তাহার অনুরাগী মনুষ্য রূপী রাক্ষস বর্গের চরিত্রে জাগ্রত রহিয়া গেল তাহারা সক্রিয় থাকিল। তাহার ফলস্বরূপ আবার অন্যায় হইবে! আবার সীতা হরণ হইবে! আবার প্রজা মরিবে!আবার বিচার নিশ্চিহ্ন হইবে! শ্রী রামের ন্যায়, ধর্ম, প্রজা কল্যাণ পুনঃ প্রতিষ্ঠিত হইবেনা কি?
The New World (Natun Prithibi)
যুগাবতার শ্রী রাম তাঁহার হৃদয় সর্বদা ধর্ম পথেই সম্পৃক্ত রাখিতেন। কোনো প্রকারে মুহূর্তের জন্যও তাঁহার আচরণ ধর্ম বিচ্যূত হইত না। কেবলমাত্র প্রজা কল্যাণ নহে, পুত্র রূপে, ভ্রাতা রূপে, পতি রূপেও তিনি সমান ভারসাম্য রক্ষা করিতে সক্ষম ছিলেন। তিনি স্থান, কাল, পাত্রের সীমা কোনোদিনও লঙ্ঘন করিয়া নিজ কর্তব্য হইতে ক্ষণ কালের নিমিত্তও বিচ্যূত হইয়া পড়েন নাই। তিনি আদর্শ, সততা, চরিত্র, গুন, জ্ঞান, ধর্ম ইত্যাদি মানবিক তথা ঐশ্বরিক উপাদান গুলিকে পরম আদরে রক্ষা ও পালন করিতেন।
এই সুমহান আদর্শ ধারণ কারী, এই সু উচ্চ ঐশ্বরিক তথাপি মানব রূপী জীবন্ত ধর্ম ও ন্যায়ের প্রতিমূর্তি শ্রী রাম কে অনুসরণ করিয়া তাঁহার পথে চলিবার অসাধারণ তপস্যা রূপী তিতিক্ষা, সহনশীলতা, ধৈর্য্য অবলম্বন করা সাধারণ মনুষ্য জীবনের পক্ষে সহজসাধ্য নহে।
যাহারা নিজ নিজ কর্তব্য পালন করিল না , যাহারা নিজ মাতা পিতার প্রতি , নিজ ভ্রাতা, ভগিনীর প্রতি, নিজ মিত্রের প্রতি, নিজ প্রতিবেশীর প্রতি, নিজ আত্মীয়ের প্রতি, নিজ সন্তানের প্রতি, নিজ স্ত্রীর প্রতি কোনরূপ কর্তব্য পালন করিল না তাহাদের পক্ষে শ্রী রামের পথ অনুসরণ ও প্রতিপালন এত সহজ নহে। শ্রী রামের নাম দুঃখী কে সুখ প্রদান করে, অন্ধ কে আলো দান করে, নির্ধন কে ধন দান করে, বিপথ গামী কে ধর্ম ও ন্যায় পথে অনুপ্রাণিত করে, নারীকে ভরসা ও বিশ্বাস প্রদান করে, পুরুষ কে তার পরিপূর্ণতা প্রদান করে, বীর কে প্রতিষ্ঠা করে, দূর্বল কে বল দান করে!
শ্রী রামের নাম জাগতিক সুখ দুঃখের বাহিরে এক আধ্যাত্মিক,অনন্ত শক্তি প্রদান করিয়া সমগ্র মানব জাতিকে ঐক্যবদ্ধ, ন্যায় পরায়ন, ধর্ম পথ গামী, কর্তব্যে স্থির করিয়া তুলে তাহার উন্নতির সম্ভাবনা কে কলঙ্ক মুক্ত সর্বোচ্চ সীমায় প্রতিষ্ঠা করিতে সক্ষম।
বিড়ম্বনা এইখানে, সমস্যার মূল এইখানে যে, সাধারণ মনুষ্যগনের জীবনে শ্রী রামের আদর্শ অনুসরণ সহজে সম্ভবপর হইয়া উঠে না কারণ তাহারা শ্রী রাম অপেক্ষা অযোগ্য, অধার্মিক , দুরাচারী, নীতি ভ্রষ্ট শাসকের আচরণ অধিক মাত্রায় অনুসরণ করিয়া থাকে!
……ক্রমশঃ প্রকাশিত।