By Subrata Mukherjee
In love with Golapi, Subratagolapi.

বিরল প্রজাতীয়!
তাহার অভূতপূর্ব ভঙ্গিমায়, অতি আশ্চর্য আকারে মিথ্যা বলিবার দক্ষতা তাহার সন্নিকটে এমনকি বহুদূরের সাধারণ মনুষ্য প্রাণীকেও মুহূর্তের মধ্যে হতচকিত করিয়া দিতে পারে।এমন করিয়া এত অনর্গল অথচ নির্ভেজাল মিথ্যার মায়াজাল এত সুচারু রূপে পরিবেশন করিবার অপ্রাকৃতিক ক্ষমতা এই সুবিশাল ব্রম্ভাণ্ড লোকেও বিরল হইতে পারে।
তাহার সুপ্রশস্ত ও অসংখ্য গুণগ্রাহী কখনও তাহাকে একটিবারের জন্যও তাহার এই অপগুণের এত সীমাহীন প্রয়োগের বিষয়ে প্রশ্ন করিতেও সাহস করেনা। ক্রমাগত প্রশংসা শুনিতে শুনিতে তাহার মস্তিষ্ক প্রশংসা ব্যতীত আর অন্য কোনো প্রকারের বাক্যের অর্থ অনুধাবন করিতে পারেনা।
অতি বিরল প্রজাতির প্রাণী রূপে সে এই বিশ্ব ব্রম্ভাণ্ডের আকাশে বাতাসে শুধু মাত্র স্বপ্রশংসা র সঙ্গীত শুনিতে অভ্যস্ত হইয়া পরিয়াছে। এমন অতি অসাধারণ মিথ্যার বায়ুমণ্ডলে তাহার অপ্রিয় কোনো প্রকারের বাতাসের প্রবেশ একপ্রকার নিষিদ্ধ বলিলেও অত্যুক্তি হইবেনা।
এমন অতি অসাধারণ একপ্রকার প্রাণী আমাদের পরিমণ্ডলে যে বিরাজ করিতেছে, সেই বিষয়ে আমরা সৃষ্টিকর্তার নিকটে চিরকৃতজ্ঞ থাকিব। আমাদের ন্যায় এত তুচ্ছ, অতি সাধারণ মনুষ্য প্রাণের গ্লানিময় জীবনের ক্ষত বিক্ষত মুহুর্ত গুলিকে মনোরঞ্জন করাইবার এত সহজ উপায় সৃষ্টি কর্তা এইভাবে উপস্থিত করিবেন তাহা আমরা ইহার পূর্বে ভাবিতেও পারিনাই।
এইরূপ অভাবনীয় সুযোগের অপেক্ষায় আমাদের ন্যায় অতি নগণ্য মনুষ্য প্রাণের উপযুক্ত দিনের সূচনা কোনোদিনও বিঘোষিত হয়নাই। নিত্য দিনানিপাত যাহাদের সৌভাগ্যের প্রতীক রূপে বিবেচিত হইয়া থাকে, যাহাদের মনোজগতের সমস্ত প্রকার ইচ্ছা অনন্তকাল ব্যাপী অনুচ্চারিত থাকিয়া ধীরে ধীরে সুপ্ত ও মুমূর্ষু হইয়া প্রাণ হইতে ক্রমাগত বাহির হইবার সংকল্প করিতে থাকে, তাহাদের নিকট সেই বিরল প্রজাতীয় অসামান্য ও প্রকাণ্ড প্রাণীর দোষ অন্বেষণ করিবার বিন্দুমাত্র প্রয়াস ভীষণ রূপে বিলাসিতার পরিচয় বহন করিবে!
এমত অবস্থায়, সেই নগণ্য প্রাণীকুল সেই বিরল প্রজাতীয় প্রতিভার সম্মুখীন হইবামাত্র অকালেই বিলুপ্ত হইয়া যাইবে। যাহারা কেবলমাত্র জীবন ধারণকেই ঈশ্বরের পরম আশীর্বাদ জ্ঞান করিয়া থাকে, যাহারা অদ্যাবধি সংযম, ত্যাগ, তিতিক্ষা, সদাচারণ ইত্যাদি ঐশ্বরিক গুণাবলীর সমক্ষে জীবনভর প্রাণপাত করিয়া থাকে, তাহাদের পক্ষে, ওই ভীষণ ক্ষমতাশালী মায়াবী বিরল প্রজাতীয় মিথ্যার বিরুদ্ধাচরণ করিয়া সম্মুখ সমরে পদার্পণ করিবার ঐকান্তিক ইচ্ছার বাহিরে সূচাগ্রবৎ অধিক যোগদান সম্ভবপর নহে।
নিত্য দিবস নিদারুণ নিপীড়নের যাতনা যন্ত্রে পিষ্ট হইয়াও, সহস্র কোটি পর্বতপ্রমাণ বাধা বিঘ্ন অতিক্রম করিয়া আজ আমাদের তুল্য অসহায় অতি সাধারণ প্রাণীর সভ্যতা অতি আশ্চর্য রূপে এই পবিত্র ধরাধামে জীবিত রইয়াছে। অতি সীমিত ইচ্ছা এবং তাহারও বেশী সীমিত অধিকারের উঁচু, নিচু, অসমতল ভূমির ন্যায়, আমাদের জীবন ভাগ্যের বিষয় গুলি যেন চক্রবৎ আবর্তিত হইতে থাকে!
আমাদের প্রত্যেক জন মনুষ্য অদ্যাপি চতুর হয়নাই, অনেক মনুষ্য এখনও সরলতার জীবন সারণী কেই অনুসরণ করিয়া ধর্ম পথে জীবিকা নির্বাহ করে। ছলনা,কৌশল,ষড়যন্ত্র ইত্যাদি নানাবিধ পাশবিক পন্থা আমাদের অনেক মনুষ্যের এখনও অজানা ও অধরা। সেই প্রেক্ষাপটে, ন্যায়, নীতির বিবিধ নিয়মের অনুসারী হইয়া আমাদের বহুজন অতি সামান্য আয়োজনে দিবস রজনী অতিক্রম করিতে করিতে মহানন্দে বৃদ্ধ এমনকি অক্ষম অবস্থায় উপনীত হইয়াছে!

সর্বশক্তিমান সৃষ্টিকর্তা তাঁহার উদার ও সৃষ্টিশীল মনের অদম্য উৎসাহে বহু এমন চমৎকার করিয়াছেন যাহা আমার এই অতি সামান্য জ্ঞান এবং সামান্য তম অনুভব শক্তির বলে আমি ব্যাখ্যা করিতে পারিবনা যদিও সে ক্ষমতাও আমার নাই। শুধু এই বিষয়টি আমি অনুধাবন করিতে সক্ষম হই যে সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই একদিন সুবিচার করিবেন। যে প্রকারে তিনি এই জগৎ ব্রহ্মাণ্ডে প্রাণ সঞ্চার করিয়াছেন সেই প্রকারেই তিনি তাহাদের রক্ষাও করিবেন। যে সৃষ্টির লীলা তাঁহার মাহাত্ম্য কে সুপ্রতিষ্ঠিত করিয়াছে, যে প্রকারে তিনি সর্বকালে সর্বজীবে বিরাজ করেন, সেই প্রকারেই হউক কিম্বা অন্য কোনো প্রকারে, তাঁহার লীলার রহস্য একদিন উন্মোচিত হইবেই!
এমন সুবিশাল ও সুমহান সৃষ্টির, সূক্ষ্ম, জটিল কর্ম কাণ্ডের পূর্ণাঙ্গ বিবরণ এত সামান্য পরিসরে আলোকিত করা একপ্রকার অসম্ভব বলিয়াই প্রতীয়মান হইয়া থাকে। তথাপি, সেই মহান সৃষ্টির গতিপ্রকৃতি, অনুসন্ধান পূর্বক তথ্য সম্বন্ধীয় জ্ঞানের উপলব্ধি, জ্ঞানপিপাসু সকল মনুষ্য প্রাণের উপযোগী হইতে পারে এই ধারণাকে অনুসরণ করিয়া আমি অনেকাংশে অগ্রসর হইতে সাহসী হইয়াছিলাম।
The New World (Natun Prithibi)
সেই রহস্যের সমাধান করা আমার যোগ্যতার বাহিরে এবং অতি উচ্চস্তরীয় বিষয় বলিয়া আমি প্রথমেই স্বীকার করিয়া লইয়াছি। বলিতে কুণ্ঠা নাই যে সেই মহা সৃষ্টির সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম অতি অসামান্য রূপ অবলোকন করিয়া তাহাকে পুনরায় অনুধাবন করিয়া সম্পূর্ণ প্রকারে সম্পৃক্ত হইবার যোগ্যতা আমার নাই।
মনুষ্য প্রাণের উপযোগী যাহা কিছু প্রয়োজন এবং যাহা সকল পরিপন্থী সেই বিষয়ে আমি জানিবার আকাঙ্খা প্রকাশ করিয়া ছিলাম এবং তাহারই তাড়নায়, আমি শৈশব কাল হইতেই দৌড়াইয়া বেড়াইতেছি। সেই রহস্যের পরিসমাপ্তি হয়তো একদিন ঘটিবে কিন্তু সেই বিরল বিস্তারিত কর্মকাণ্ডের অতি সক্রিয় ছন্দের দোদুল্যমানতার সঙ্গে আমি যে একাত্ম হইবার প্রয়াস করিয়াছি ইহাতেই আমার জীবন ধন্য বলিয়া আমি মনে করি।
আমার বিস্ময়ের সীমানা প্রসারিত হইয়া পড়ে যে মুহূর্তে আমি প্রত্যক্ষ করিবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সেই রহস্যের সমাধানে মনোনিবেশ করিয়া থাকি।
পুনরায় বিস্ময়ের অর্গল ছিন্ন ভিন্ন হইয়া পড়ে, যখন এমন চমৎকার, ঐশ্বরিক, কল্যাণময়ী সৃষ্টির অন্তরালে আকস্মিক কোনো দুর্যোগের ন্যায় কোনও এক বিরল প্রজাতীয় জীব, মনুষ্য শরীর ধারণ করিয়া আমাদেরই সন্নিকটে আবির্ভূত হইয়া পড়ে এবং তাহার আবির্ভাব ও কর্মকাণ্ড সাধারণ মনুষ্য প্রাণের, মনুষ্য জগতের, মনুষ্য চিন্তার, মনুষ্য সৃষ্টির সম্পূর্ণ অথবা আংশিক পরিপন্থী হইয়া উঠে।
যে মনুষ্য প্রাণ অপর মনুষ্য প্রাণের দুর্দশা অনুভব করিতে অসক্ষম ও অসচেষ্ট, যাহার অনুভূতি সাধারণ মনুষ্য প্রাণের জন্য প্রস্তুত হইতে পারেনা, যাহার কর্মকাণ্ড আকারে বৃহৎ হইলেও চেতনায় ক্ষুদ্র, যাহার বাহ্যিক ভোগ, বিলাস অন্তরের গভীরে সত্য অপেক্ষা অনেক বিস্তৃত, সেই মনুষ্য কি কখনও ঈশ্বরের অস্তিত্ব কে অন্তঃকরণে, কৃতজ্ঞ চিত্তে অনুসরণ করিয়া থাকে?যে মনুষ্য সাধারণ প্রাণের দুর্দশা দুর করিতে পারেনা, সামান্য কে বরণ করিতে পারেনা, মিথ্যার আশ্রয় কে শ্রেয় জ্ঞান করিয়া উহাতেই মনোনিবেশের অনুসারী হইয়া উঠে তাহার পক্ষে আর যাহা হউক কোনো রূপ মহান কার্য সম্পাদন করা সম্ভবপর নহে।
ঈশ্বরের উৎস হইতে সৃষ্টি হইয়াও, মনুষ্য শরীর ধারণ করিয়াও যাহার চিন্তা, যাহার কর্ম, যাহার আচরণ সামান্য, নিরাশ্রয়, অসহায়, নিরন্ন মনুষ্য কে পীড়িত করিয়া থাকে সেই আপাত শক্তিমান মনুষ্য প্রাণের সৃষ্টি, প্রতিষ্ঠা এবং তাহার বিবরণ কে সমর্থন করিব কেমন করিয়া? কী কারণেই বা তাহার নেতৃত্ব অথবা কর্তৃত্ব সমগ্র সাধারণ মনুষ্য জীবনের সহায়ক হইয়া উঠিবে? কী প্রকারেই বা সেই প্রকার আড়ম্বর সর্বস্ব, শুন্য সার, ক্ষমতা লোভী, মিথ্যাচারী, ভ্রষ্ট, অপরিনামদর্শী মনুষ্য প্রাণের সৃষ্টি ও প্রতিষ্ঠা বিরল প্রজাতীয়ই বা হইবে না কেন?
রচানাংশটি “বিরল প্রজাতীয়”নামক মূল গ্রন্থ থেকে সংগৃহীত।
লেখক:সুব্রত মুখার্জী
The New World (Natun Prithibi).
©️ Subratagolapi.
Wonderful!
LikeLike